
অনন্ত জীবনের পাথেয়
ইহতিশামুল হক নাঈম
أين زادك للرحيل أخي؟
তোমার সফরের পাথেয় কোথায়, ভাই?
الحمد لله، نحمده ونستعينه ونستغفره، ونعوذ بالله من شرور أنفسنا ومن سيئات أعمالنا، من يهده الله فلا مضل له، ومن يضلل فلا هادي له، وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له، وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁকে প্রশংসা করি, তাঁর সাহায্য ও ক্ষমা চাই এবং নিজেদের মন্দ প্রবৃত্তি ও কুকর্ম থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, কেউ তাকে ভ্রান্ত করতে পারে না; আর যাকে তিনি ভ্রান্ত করেন, তার কোনো পথপ্রদর্শক নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই; তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল।
أما بعد..
প্রিয় ভাই,
মৃত্যুর বাস্তবতার সামনে আমাদের থেমে কিছু চিন্তা করা উচিত।
এই কঠিন বাস্তবতা মানুষকে এক জীবন থেকে অন্য জীবনে পাড়ি জমানোর উপলক্ষ্য করে তোলে। এক ঘর থেকে অন্য ঘরে যাত্রা।
এটি এমন এক বাস্তবতা যা চিরস্থায়ী আশাকে চূর্ণ করে দেয়, বুদ্ধিবৃত্তিকে বিভ্রান্ত করে তোলে, এবং মানুষকে-তাদের অবস্থা যাই হোক না কেন-এই সিদ্ধান্তে উপনীত করে যে এই জীবন কেবল এক ক্ষণস্থায়ী যাত্রা।
এখানে স্থায়িত্ব নেই, এখানে নিরাপত্তাও নেই।
এর মাঝে কেউ কেউ এর রহস্য বুঝে নিয়েছে: তারা আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন, ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে রাসূল ও নবী হিসেবে মেনে নিয়েছে। তারা জানে যে জীবন একটি পরীক্ষার সফর-একটি যাত্রা যা একজন মুমিন তাঁর রবের দিকে করে থাকেন, যেখানে তাঁর আশা এই যে, তিনি এমন পাথেয় সংগ্রহ করবেন যা তাঁকে নিরাপদে ও সফলভাবে পৌঁছে দেবে।
আরেকদল মানুষ আছে যারা জীবনের ক্ষণস্থায়িত্ব ও তুচ্ছতাকে উপলব্ধি করেছে, কিন্তু তারপরও এটিকে চূড়ান্ত গন্তব্য হিসেবে গ্রহণ করে বসেছে এবং এজন্য তারা নিজেদের সফরের পাথেয় সংগ্রহ করেনি। ফলে তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে, বিভ্রান্তি ও যন্ত্রণা আর দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে আছে।
তুমি কোন দলে? প্রিয় ভাই, তুমি কি তোমার সফরের পাথেয় প্রস্তুত রেখেছো?
তুমি তো একজন পথিকমাত্র।
كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ
“তুমি দুনিয়াতে এমনভাবে জীবনযাপন করো যেন তুমি একজন অপরিচিত বা পথচারী।”
-সহীহ বুখারী: হাদীস ৬৪১৬
এই পরামর্শটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিয়েছেন আবদুল্লাহ ইবন উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুমা-কে। তিনি আরও বলেন:
“إذا أمسيت فلا تنتظر الصباح، وإذا أصبحت فلا تنتظر المساء، وخذ من صحتك لمرضك، ومن حياتك لموتك”
“যখন সন্ধ্যা পাও, তখন সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কোরো না। যখন সকাল পাও, তখন সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা কোরো না। তোমার সুস্থতা থেকে তোমার অসুস্থতার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো, আর তোমার জীবন থেকে তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করো।”
-সহীহ বুখারী: হাদীস ৬৪১৭
হোক তুমি নিজেকে এই জীবনের পথচারী মনে করো বা স্থায়ী মনে করো-শেষ পর্যন্ত তুমি চলে যাবেই!
তোমার অবস্থা যাই হোক, তুমি এ জীবন অতিক্রম করছোই।
وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍ مِّن قَبْلِكَ الْخُلْدَ ۖ أَفَإِيْن مِّتَّ فَهُمُ الْخَالِدُونَ
আপনার পূর্বে আমরা কোনো মানবকে স্থায়িত্ব দিইনি। তবে কি আপনি মৃত্যুবরণ করলে তারা চিরস্থায়ী হবে?
-সূরা আল-আনবিয়া: আয়াত ৩৪
كُلُّ مَنْ عَلَيْهَا فَانٍ، وَيَبْقَىٰ وَجْهُ رَبِّكَ ذُو الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ
পৃথিবীর যা কিছু আছে তা ধ্বংসশীল। স্থায়ী কেবল আপনার প্রতিপালকের মুখমন্ডল, যিনি মহিমা ও সম্মানের অধিকারী।
-সূরা আর-রহমান: আয়াত ২৬-২৭
সুতরাং,
সকলেই, যদিও আয়ু দীর্ঘ হয়, অবশেষে বিদায় নেয়।
দুনিয়ার ঝলক যতই তীব্র হোক, তা এক সময় নিঃশেষ হবে।
দুনিয়ার খুঁটি যতই দৃঢ় মনে হোক, একদিন তা ঢলে পড়বে।
ألا أيُّهَا الناسُ دَنياكُمُ راحلةٌ
হে মানুষ! তোমাদের দুনিয়া বিদায় নিচ্ছে,
أراكَ غافلاً تلعبُ في موتِ المفارقِ
আমি তোমাকে দেখি, তুমি গাফিল, মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে খেলায় মগ্ন।
ولا تَرعَ للبلوى معانينَ إلى البَلقا
তুমি বিপদে পতিতদের কথা ভাবো না, যেন তুমি নিজে এর বাইরে।
تركوا الدنيا جميعًا كما هيا
তারা তো দুনিয়াকে পুরোপুরি ফেলে রেখে গেছে ঠিক যেমন ছিল।
ولم يخرجوا منها إلا بقطنةٍ وخِرقا
তারা তো শুধু এক টুকরো কফন ও কিছু পুরনো কাপড় নিয়েই বেরিয়ে গেছে।
وما عَمَّروا من منزلٍ ظلَّ خاويًا
তারা যত ঘরবাড়িই তৈরি করুক না কেন, তা একসময় শূন্যই থেকে গেছে।
وَهُمْ فِي بُطُونِ الأَرْضِ صَرْعَى جَفَاهُمْ
তারা এখন পৃথিবীর গর্ভে মৃত পড়ে আছে,
خَصِيبُ قَبْرٍ كَدَقيقٍ وَخَاوِيَا
আর তাদের কবরে কোনো জৌলুস নেই, যেমন তৃণহীন বালুকণার মতো।
وَأنْتَ غَدًا أو بَعْدَ غَدٍ فِي جَوَارِهِمْ
আর তুমি আগামীকাল অথবা তার পরদিনই তাদের পাশে যুক্ত হয়ে যাবে,
وَحِيدًا فَرِيدًا فِي المَقَابِرِ ثَاوِيَا
একাকী, একান্ত, কবরে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে।
جَفَاكَ الَّذِي قَدْ كُنْتَ تَرْجُو وَدَّهُ
যার ভালোবাসা তুমি এতদিন ধরে আশা করেছিলে, সে-ই তোমাকে ভুলে যাবে।
وَلَمْ تَرَ إِنسَانًا بِعَهْدِكَ وَافِيَا
তুমি এমন কাউকেও পাবে না, যে তোমার প্রতিজ্ঞার প্রতি বিশ্বস্ত থাকবে।
فَكُنْ مُسْتَعِدًّا لِلْحِمَامِ فَإِنَّهُ
তাহলে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও, কেননা তা আসবেই,
قَرِيبٌ وَدَعْ عَنْكَ الْمُنَى وَالأَمَانِيَا
আর আশা ও কল্পনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নাও।
دخل رجلٌ على أبي ذرٍّ رضي الله عنه
এক ব্যক্তি আবু যার রাযিয়াল্লাহু আনহুর কাছে প্রবেশ করল।
فجعل يُقلِّبُ بصرهُ في بيته
সে তাঁর ঘরের দিকে তাকাতে লাগল বারবার।
فقال له أبو ذر: أين متاعكم؟
তাকে আবু যার জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মাল-সম্পদ কোথায়?
قال: لنا بيتٌ نوجِّهُ إليه صالحَ متاعِنا
সে বলল, আমাদের এমন এক ঘর আছে যেখানে আমরা ভালো মাল পাঠাই।
قال أبو ذر: إنّ صاحب المنزل لا يدعنا فيه
আবু যার বললেন, এই ঘরের মালিক আমাদের এখানে থাকতে দেয় না।
فَتَأمّلْ في هذا الفقه النبيل
এই সূক্ষ্ম উপলব্ধি নিয়ে ভাবো।
صاحب البيت هو الله، وقد قال الله تعالى:
﴿إِنَّمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ﴾
এই পার্থিব জীবন তো কেবল ভোগ-বিলাস; আর পরকালই হচ্ছে চিরস্থায়ী আবাস।
-সূরা গাফির: আয়াত ৩৯
وقال عمر بن عبد الرحمن:
উমর ইবন আবদুর রহমান বলেন,
إنّ الدنيا ليست بدار قرارٍ،
এই দুনিয়া হলো স্থায়ী বাসস্থান নয়।
كتب الله عليها الفناء،
আল্লাহ তাতে ধ্বংস লিখে দিয়েছেন।
وكتب على أهلها منها الظعن،
এবং তার অধিবাসীদের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন এখান থেকে বিদায় নেওয়া।
فأحسنوا الرحلة بأحسن ما بحضرتكم من النقلة
সুতরাং তোমাদের মধ্যে যা উত্তম আছে তা দিয়েই উত্তম সফর প্রস্তুত করো।
وتزوّدوا منها فإنّ خير الزاد التقوى
আর দুনিয়া থেকে পাথেয় সংগ্রহ করো, কেননা উত্তম পাথেয় হলো তাকওয়া।
قال النبي ﷺ:
«ما لي وللدنيا؟ إنما مثلي ومثل الدنيا كمثل راكبٍ قال في ظل شجرة، ثم راح وتركها»
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমার ও দুনিয়ার কী সম্পর্ক? আমার দৃষ্টান্ত আর দুনিয়ার দৃষ্টান্ত তো এমন, যেন এক পথিক কোনো গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিল, তারপর তা ছেড়ে চলে গেল।
-তিরমিযী: হাদীস ২৩৭৭, আহমাদ
أخي، على كل حال، أيامك تسوقك إليه
প্রিয় ভাই! যেভাবেই হোক না কেন, তোমার দিনগুলো তোমাকে মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
أنت معنيٌّ بالرحيل
তুমি এই পাড়ি দেওয়ার মধ্যেই নিয়োজিত।
وخطواتك تقبل بك عليه
তোমার প্রতিটি পদক্ষেপ তোমাকে তার দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।
وأنت في الحياة مجبورٌ على العبور
এই জীবনে তুমি পাড়ি দেওয়ার জন্য বাধ্য।
وخاضعٌ لموتٍ مقدور
তুমি এমন এক অবধারিত মৃত্যুর অধীন।
تسابق الدنيا إليك عفواً
দুনিয়া তো আপনিই তোমার দিকে এগিয়ে আসছে।
ألست ترى ذاك المصير إلى الانتقال؟
তুমি কি দেখো না এই অনিবার্য পরিবর্তনের পরিণতি?
وما دنياك إلا مثل فيءٍ
তোমার দুনিয়া তো কেবল এক ছায়ার মতো,
أظلّك ثم آذن بالزوال
যেটা কিছুক্ষণের জন্য তোমার উপর ছায়া দেয়, তারপর তা মিলিয়ে যায়।
فأين زاد الرحيل؟
তাহলে কোথায় তোমার সফরের পাথেয়?
إن أيقنت أنك عن قريب سترحل
যদি তুমি নিশ্চিত হও যে অচিরেই তুমি বিদায় নেবে,
فما استعدادك لسفر الآخرة الطويل؟
তাহলে আখিরাতের দীর্ঘ সফরের জন্য তোমার প্রস্তুতি কোথায়?
أين مقتضى إيمانك بسؤال القبر؟
কবরের প্রশ্নের প্রতি তোমার ঈমানের বাস্তব প্রতিফলন কোথায়?
وهول الحشر؟ والبعث؟ والحساب؟
পুনরুত্থান, হাশরের ভয়াবহতা, ও হিসাবের প্রস্তুতি কোথায়?
بل موتك فاصلٌ بين حياةٍ وحياة
বরং তোমার মৃত্যু দুটি জীবনের মাঝে একটি সংযোগ,
وليس هو نهاية المطاف
এটি চূড়ান্ত পরিণতি নয়।
القبر وسؤاله، وهول البعث وأحواله، وطول الحساب وجلاله
কবর ও তার প্রশ্ন, পুনরুত্থানের ভয়াবহতা, দীর্ঘ হিসাব ও তার মহিমা
هو نقلةٌ تسير بك إلى عالمٍ جديد
তোমাকে নিয়ে যাবে এক নতুন জগতে, এক স্থানান্তর।
﴿أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُونَ﴾
তোমরা কি মনে করেছিলে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে না?
-সূরা আল-মুমিনূন: আয়াত ১১৫
بعث الله النبيين والرسل –أخي-لأجل فهم هذه الحقيقة
প্রিয় ভাই! আল্লাহ নবী ও রাসূলদের পাঠিয়েছেন এই বাস্তবতাটি বোঝার জন্য।
كلهم اتفقوا على بيان هذه الحقيقة لقومهم
তাঁরা সকলেই এই সত্যটি তাদের জাতির সামনে তুলে ধরেছেন।
﴿يَا قَوْمِ إِنَّمَا هَٰذِهِ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَإِنَّ الْآخِرَةَ هِيَ دَارُ الْقَرَارِ﴾
হে আমার কওম! এই পার্থিব জীবন কেবল উপভোগ্য বস্তু, আর পরকালই হচ্ছে স্থায়ী আবাস।
-সূরা গাফির: আয়াত ৩৯
فلا تغفل، فإنك لم تُخلق سدى
তাহলে গাফেল হয়ো না, কারণ তুমি অনর্থক সৃষ্টি হওনি।
وإذا رأيت الناس قد سَخِرُوا فِطْنَتَهُم للدنيا
আর যখন তুমি দেখো, মানুষ তাদের মেধা কেবল দুনিয়ার পেছনে খরচ করছে,
فاستعمل فطنتك للآخرة
তখন তুমি তোমার বুদ্ধিকে আখিরাতের জন্য কাজে লাগাও।
تذكَّر أن الموت يأتي على غِرَّة
মনে রেখো, মৃত্যু হঠাৎ করেই আসে।
واجعل همك كل همك في معادك
তোমার সমস্ত চিন্তা ও উদ্বেগ যেন তোমার প্রত্যাবর্তনের দিনের জন্য হয়।
وأعدّ لفُجأَته حسابًا
তার অপ্রত্যাশিত আগমনের জন্য প্রস্তুতি নাও।
وكيف يكون وقتها حالك؟
তখন তোমার অবস্থা কেমন হবে?
بمَ قد يُختَم لك؟
তোমার জন্য কী পরিণাম লেখা হবে?
تأمّل في الناس وقد تمايلت بحملك أكتافهم
ভাবো তো, যখন মানুষ তোমার জানাজার খাটিয়ার ভার বহন করে,
ولم يملك لك أحدهم نفعًا ولا ضرًا
তখন তাদের কেউই তোমার উপকার কিংবা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখবে না।
فقبروك، ودفنوك، وودّعوك
তারা তোমাকে কবরে রেখে দেবে, মাটি দেবে, বিদায় জানাবে।
فكيف ستدخل عالم البرزخ وحدك؟
তুমি একা কীভাবে প্রবেশ করবে সেই বরযখের জগতে?
كيف ستلاقي يومها ربك؟
সেদিন কীভাবে তুমি তোমার রবের মুখোমুখি হবে?
وهل ستسعد وقتها أم تخيب؟
তখন কি তুমি সুখী হবে, না ব্যর্থ হবে?
كيف تجيب؟
কীভাবে উত্তর দেবে?
﴿بَلِ الْإِنسَانُ عَلَىٰ نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ﴾
বরং মানুষ নিজেই নিজের বিষয়ে সচেতন।
-সূরা আল-ক্বিয়ামাহ: আয়াত ১৪
يا من تمتّع بالدنـا وزينتهـا
হে সেই ব্যক্তি, যে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস আর সৌন্দর্যে বিভোর,
ولا تنام عن اللذات عيناه
যার চোখ আরাম-ভোগ ছাড়া কিছুই চিনে না, ঘুমায় না।
شغلتَ نفسَك فيما ليس تُدرِكُه
তুমি নিজেকে এমন কিছুর পেছনে ব্যস্ত করে রেখেছ যা তুমি কখনোই পাবে না।
فتقِ الله من حولِ الله مـنـاه
তাহলে আল্লাহর শর্ত আর সীমারেখা সম্পর্কে ভয় করো।
قال ابن الجوزي رحمه الله في نصيحته لابنه:
ইবনুল জাওযী রহিমাহুল্লাহ তাঁর পুত্রকে nasihat দিতে গিয়ে বলেন:
من تفكّر في الدنيا قبل أن يُوجَد، رأى مدةً طويلة
যে ব্যক্তি তার সৃষ্টি হওয়ার আগের সময় নিয়ে চিন্তা করে, সে দীর্ঘ সময় দেখবে।
وإذا تفكّر فيها بعد أن يخرج منها، رأى مدةً طويلة
আর যখন সে দুনিয়া থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরের সময় চিন্তা করে, তখনও দীর্ঘ সময় দেখতে পাবে।
وعلم أن اللبث في القبور طويل
সে বুঝে যাবে, কবরে অবস্থান অনেক দীর্ঘ সময়ব্যাপী হবে।
وإذا تفكّر في يوم القيامة، علم أنه خمسون ألف سنة
যখন সে কিয়ামতের দিন নিয়ে ভাববে, তখন সে বুঝবে সেটি পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।
فإذا تفكّر في اللبث في الجنة والنار، علم أنه لا نهاية له
আর যদি জান্নাত বা জাহান্নামে অবস্থানের বিষয় নিয়ে চিন্তা করে, তখন সে বুঝবে সেটার তো কোনো শেষ নেই!
فإذا عاد إلى النظر في مقدار بقائه في الدنيا،
অতঃপর যখন সে আবার চিন্তা করে এই দুনিয়াতে তার অবস্থানের সময়কাল নিয়ে,
فَرضنا ستين سنة مثلاً
ধরো, তা যদি হয় ৬০ বছর,
فإنه يمضي منها ثلاثين سنة في النوم
তাহলে এর মধ্যে ৩০ বছরই কেটে যায় ঘুমে।
ونحوًا من خمس عشرة في الصِّبا
আর প্রায় ১৫ বছর চলে যায় শৈশবে।
فإذا حُسب الباقي، كان أكثره في الشهوات والمطاعم والمكاسب
যখন বাকিটা হিসাব করা হয়, দেখা যায় বেশিরভাগ সময় যায় ভোগবিলাস, আহার আর অর্থ উপার্জনে।
فإذا خَلُصَ ما للآخرة، وجد فيه من الرياء والغفلة كثيرًا
যদি এর মধ্যে আখিরাতের জন্য কিছু থাকে, তাতেও রিয়া ও গাফেলতি প্রচুর মিশে থাকে।
فبماذا تشتري الحياة الأبدية؟
তবে তুমি চিরস্থায়ী জীবন কী দিয়ে ক্রয় করবে?
وإنما الثمن هذه الساعات!!
এর মূল্য তো কেবল এই কয়েক ঘণ্টা মাত্র!!
-লাতাইফুল কাবিদ: পৃষ্ঠা ১৬
أخي، أجل، هي ساعاتٌ معدوداتٌ تحملك وتسوقك
প্রিয় ভাই, হ্যাঁ! এই গোনাযোগ্য ঘণ্টাগুলিই তোমাকে বহন করে, তোমাকে টেনে নিয়ে যায়,
وتطوي بك مراحل الطريق
আর এই সময়গুলোতেই তুমি পথের এক একটি ধাপ অতিক্রম করো।
وكلّما انقضت ساعةٌ، انقضت مرحلة
প্রতিটি ঘণ্টা শেষ মানেই জীবনের এক একটি ধাপ শেষ।
نسير إلى الآجال في كلّ لحظةٍ
আমরা তো প্রতি মুহূর্তেই মৃত্যুর দিকে ধাবমান।
وأيامُنا تُطوى وهنّ مراحلُ
আর আমাদের দিনগুলোও তো গুটিয়ে আসছে, কারণ এরা সবই সফরের ধাপ।
ولم أر مثل الموت حقًّا كأنّه
আমি মৃত্যুর মতো সত্য আর কিছুই দেখিনি,
إذا ما تخطّته الأمانيُّ باطلُ
আশা-আকাঙ্ক্ষা যখন এটিকে অতিক্রম করে, তখন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়।
وما أقبح التفريط في زمن الصِّبا
কতই না ঘৃণিত, তরুণ বয়সে সময় নষ্ট করা!
فكيف به والشيب للرأس شاملُ؟
তাহলে যখন মাথা জুড়ে বার্ধক্যের চিহ্ন ছড়িয়ে পড়ে, তখন কী অবস্থায় পৌঁছায় মানুষ?
ترحل من الدنيا بزادٍ من التقى
তুমি এই দুনিয়া থেকে তাকওয়ার পাথেয় নিয়ে রওনা হও,
فعمّرك أيامٌ وهنّ قلائلُ
তোমার জীবন তো কয়েকটি দিনের সমষ্টি, এবং তা খুবই অল্প।
كتب بعض السلف إلى أخٍ له:
সালাফদের কেউ একজন তাঁর এক ভাইকে চিঠি লিখে বলেন:
“يخيّل إليك أنك مقيمٌ، بل أنت دائبُ السير، تُساق مع ذلك سوقًا حثيثًا
তোমার মনে হতে পারে তুমি স্থায়ী হয়ে আছো, কিন্তু বাস্তবে তুমি চলমান; এবং সেই চলা খুবই দ্রুতগতিতে।
الموت موجَّهٌ إليك،
মৃত্যু তোমার দিকেই ধাবিত হচ্ছে,
وما مضى من عمرك فليس بكارٍ إليك،
তোমার অতীত জীবন তো আর ফিরে আসবে না,
والدنيا تُطوى من ورائك،
আর এই দুনিয়াও তোমার পেছনে গুটিয়ে আসছে,
حتى يكرّ عليك يوم التغابن”
এমনকি একসময় দিবস প্রতারণার (يوم التغابن) দিন তোমার সম্মুখে এসে দাঁড়াবে।
أخي، يا من أيقن قلبُك بطول السفر
প্রিয় ভাই! যাঁর অন্তর দীর্ঘ সফরের সত্যতায় নিশ্চিত,
وعلمت أنك إلى الله عائدٌ ومحتَضَر
আর জেনে গেছো তুমি আল্লাহর দিকেই ফিরে যাচ্ছো এবং একদিন মৃত্যুর কোলে শায়িত হবে।
فلا تُناقض بأعمالك يقينك
তাহলে নিজের আমল দিয়ে নিজের এই নিশ্চিত বিশ্বাসের বিরোধিতা করো না।
ولا تدَعِ الغفلةَ تنخره وتُضعفه
এবং গাফেলতি যেন তোমার এই বিশ্বাসকে ছিদ্র করতে ও দুর্বল করে দিতে না পারে,
حتى تُنسيَك زادك ومعادك
যাতে করে সে তোমাকে তোমার পাথেয় ও পরকাল ভুলিয়ে না দেয়।
فإن أقوامًا أنستهم الغفلة زاد الرحيل
কারণ, অনেক মানুষ আছে, যাদের গাফেলতি তাদের সফরের পাথেয় ভুলিয়ে দিয়েছে।
فلما قدموا، قال الله لهم:
আর যখন তারা (আখিরাতে) পৌঁছেছে, আল্লাহ তাদের বলবেন:
﴿لَقَدْ كُنتَ فِي غَفْلَةٍ مِنْ هَٰذَا فَكَشَفْنَا عَنكَ غِطَاءَكَ فَبَصَرُكَ الْيَوْمَ حَدِيدٌ﴾
তুমি তো ছিলে এ ব্যাপারে গাফেল, আর আজ আমি তোমার চোখ থেকে পর্দা সরিয়ে দিয়েছি, ফলে আজ তোমার দৃষ্টিশক্তি প্রবল তীক্ষ্ণ।
-সূরা ক্বাফ: আয়াত ২২
قال الفضيل بن عياض لرجلٍ:
ফুযাইল ইবন ইয়ায (রহিমাহুল্লাহ) এক ব্যক্তিকে বললেন:
كم أتى عليك؟
“তোমার বয়স কত হয়েছে?”
قال: ستون سنة
সে বলল: ষাট বছর।
قال: أنت منذ ستين سنة تسير إلى ربك
তিনি বললেন: তাহলে তুমি ষাট বছর ধরে তোমার রবের দিকে এগিয়ে চলেছ।
قال الرجل: إنا لله وإنا إليه راجعون
লোকটি বলল: নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।
قال الفضيل: أتعرف تفسيرها؟
ফুযাইল বললেন: তুমি জানো এর অর্থ কী?
قال الرجل: فسّرها لي
লোকটি বলল: তাহলে আপনি আমাকে ব্যাখ্যা করে দিন।
قال:
তিনি বললেন:
من علم أنه عبد الله، وأنه إليه راجع،
যে জানে সে আল্লাহর বান্দা, এবং তাঁর কাছেই ফিরে যাবে,
فليعلم أنه موقوف،
সে যেন জানে, তাকে একদিন থামিয়ে রাখা হবে (জবাবদিহির জন্য),
ومن علم أنه موقوف، فليعلم أنه مسؤول،
আর যে জানে সে থামানো হবে, সে যেন জানে তাকে প্রশ্ন করা হবে,
ومن علم أنه مسؤول، فليعد للسؤال جوابًا
আর যে জানে তাকে প্রশ্ন করা হবে, সে যেন সেই প্রশ্নের উত্তরের প্রস্তুতি নেয়।
قال الرجل: فما الحيلة؟
লোকটি বলল: তাহলে করণীয় কী? উপায় কী?
قال الفضيل:
তিনি বললেন:
يسيرة
এটা খুব সহজ।
قال الرجل: ما هي؟
লোকটি বলল: কী সেটা?
قال:
তিনি বললেন:
تحسّن فيما بقي يُغفر لك ما مضى
তুমি যদি বাকি সময়টুকু ভালোভাবে কাটাও, তাহলে আগের গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।
فإنك إن أسأت فيما بقي، أُخذت بما مضى وبما بقي
কিন্তু তুমি যদি এই অবশিষ্ট সময়টুকুতেও খারাপ করো, তাহলে তুমি আগেরটাও আর বাকি অংশটাও ধরা পড়বে।
﴿يَا أَيُّهَا الإِنسَانُ إِنَّكَ كَادِحٌ إِلَى رَبِّكَ كَدْحًا فَمُلَاقِيهِ﴾
হে মানুষ! নিশ্চয়ই তুমি তোমার রবের দিকে কঠোর পরিশ্রম করেই চলছো, আর অবশেষে তুমি তাঁর সান্নিধ্যে পৌঁছাবে।
-সূরা ইনশিকাক: আয়াত ৬
أنت –أخي-عبد الله، وعائدٌ إليه،
তুমি, প্রিয় ভাই! আল্লাহর একজন বান্দা, এবং তুমি তাঁর কাছেই ফিরে যাচ্ছো।
فأحسن فيما بقي، يغفر الله لك ما مضى،
তাই এখন থেকে ভালোভাবে চলাফেরা করো, তাহলে আল্লাহ তোমার অতীত ক্ষমা করে দেবেন।
فربك حليمٌ غفورٌ، توابٌ كريمٌ،
তোমার রব তো অত্যন্ত সহনশীল, পরম ক্ষমাশীল, তাওবাহ কবুলকারী ও মহাদানশীল।
يعفو عن الخطايا، ويبدّل السيئات حسنات،
তিনি পাপ মাফ করে দেন এবং গোনাহগুলোকে নেকিতে রূপান্তর করে দেন।
يحب التوابين، ويحب المتطهرين،
তিনি তাওবাকারীদের ভালোবাসেন, পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।
فبادر أخي، بتوبة صادقة مع الله،
তাই প্রিয় ভাই! বিলম্ব না করে আল্লাহর কাছে খাঁটি তাওবা করো।
أظهر له فيها عزمك على طاعته، وندمك على معصيته،
এই তাওবায় তোমার আজ্ঞাবহ হবার দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করো, এবং তাঁর অবাধ্যতার কারণে গভীর অনুশোচনা প্রকাশ করো।
وحبك لدينه، وضعف حيلتك، وشدة افتقارك إليه،
তাঁর দ্বীনের প্রতি তোমার ভালোবাসা, তোমার অপারগতা, এবং তাঁর প্রতি তোমার চরম নির্ভরতাও দেখাও।
فإنه لا أحد أرحم منه، ولا أكرم منه، ولا ألطف منه،
কারণ তাঁর চেয়ে দয়ালু, মহৎ, এবং কোমল কেউ নেই।
فهو يغفر الذنوب جميعًا
তিনি সব গোনাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন।
واعلم أنه مهما كانت ذنوبك، فإنها زاد الرحيل الأول،
জেনে রেখো, তোমার গোনাহ যত বড়ই হোক না কেন, তাওবা করা হলো তোমার সফরের প্রথম পাথেয়।
فبدونها لن تظفر بزَاد
তাওবা ছাড়া কোনো সফরের সঠিক পাথেয় তুমি পাবে না।
فبادر أخي بالتوبة، قبل حلول الحسرة والعذاب، وقبل بغتة المنية
তাই প্রিয় ভাই, এখনই তাওবায় ফিরে এসো-আফসোস ও শাস্তি আসার আগেই, মৃত্যু হঠাৎ এসে উপস্থিত হওয়ার আগেই।
﴿قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوا مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ، إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا، إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ﴾
বলুন, হে আমার সে সকল বান্দাগণ, যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছে! তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করেন। নিশ্চয়ই তিনিই পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
-সূরা আয-যুমার: আয়াত ৫৩
﴿وَأَنِيبُوا إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُوا لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ ثُمَّ لَا تُنصَرُونَ﴾
তোমরা তোমাদের রবের দিকে ফিরে আসো এবং তাঁর আনুগত্য করো, যাতে তোমাদের কাছে শাস্তি এসে না পড়ে। এরপর আর কেউ তোমাদের সাহায্য করতে পারবে না।
-সূরা আয-যুমার: আয়াত ৫৪
﴿وَاتَّبِعُوا أَحْسَنَ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ الْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ﴾
তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তার সর্বোত্তম অংশ অনুসরণ করো-এর আগে যে শাস্তি তোমাদের ওপর হঠাৎ এসে পড়ে, অথচ তোমরা বুঝতেও পারো না।
-সূরা আয-যুমার: আয়াত ৫৫
﴿أَن تَقُولَ نَفْسٌ يَا حَسْرَتَىٰ عَلَىٰ مَا فَرَّطْتُ فِي جَنبِ اللَّهِ وَإِن كُنتُ لَمِنَ السَّاخِرِينَ﴾
যাতে কোনো প্রাণী (কিয়ামতের দিন) না বলে: হায় আফসোস! আমি আল্লাহর সম্পর্কে গাফেল ছিলাম, আর আমি তো ঠাট্টাকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম!
-সূরা আয-যুমার: আয়াত ৫৬
﴿أَوْ تَقُولَ لَوْ أَنَّ اللَّهَ هَدَانِي لَكُنتُ مِنَ الْمُتَّقِينَ﴾
অথবা সে যেন না বলে: হায়! যদি আল্লাহ আমাকে সৎপথে পরিচালিত করতেন, তবে আমি অবশ্যই পরহেযগারদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
-সূরা আয-যুমার: আয়াত ৫৭
﴿أَوْ تَقُولَ حِينَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ أَنَّ لِي كَرَّةً فَأَكُونَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ﴾
অথবা যখন সে শাস্তি দেখবে তখন যেন না বলে: হায়! যদি আমার একবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ থাকত, তাহলে আমি অবশ্যই সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।
-সূরা আয-যুমার: আয়াত ৫৮
الإفاقة الإفاقة، والإنابة الإنابة
সতর্ক হও! জেগে ওঠো! ফিরে এসো, ফিরে এসো তোমার প্রভুর দিকে।
قبل غلق باب الإجابة
সেই দিনের পূর্বে, যখন দোয়া কবুলের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ما أحلى قدوم التائبين
তওবাকারীদের আগমন কতই না মধুর!
وما أحسن قلق التواب
তওবাকারীর অস্থিরতা কতই না সুন্দর!
فقد قرب وقت الفاقة
কারণ ঘাটতির সময় খুব নিকটে এসে গেছে।
ما أجمل وقوفهم بالباب!
তাঁদের সেই দরজায় দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য কতই না চমৎকার!
أسأتُ ولم أحسن، وجئتُ تائبًا
“আমি কুকর্ম করেছি, ভালো কিছু করতে পারিনি, কিন্তু এখন তওবাকারী হয়ে ফিরে এসেছি।”
وأنّى لعبدٍ من مواليه مهرب
আর কোনো বান্দার কি তাঁর প্রভুর কাছ থেকে পলায়নের উপায় আছে?
وإن خاب ظنٌّ في غفرانه، فمَن يؤمَّل؟
আর যদি তাঁর ক্ষমার আশা বিফলে যায়, তবে কার কাছে আমরা আশ্রয় নেবো?
فما أحدٌ منه على الأرض أخيب
এই জমিনে তাঁর চেয়ে বেশি দয়ালু, ক্ষমাশীল আর কেউ নেই।
﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ، وَلْتَنظُرْ نَفْسٌ مَّا قَدَّمَتْ لِغَدٍ، وَاتَّقُوا اللَّهَ، إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং প্রত্যেক ব্যক্তি যেন দেখে নেয় সে আগামী দিনের জন্য কী প্রস্তুত করে রেখেছে। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমরা যা করো সে সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত।
-সূরা আল-হাশর: আয়াত ১৮
قال ابن كثير رحمه الله في تفسير هذه الآية:
ইমাম ইবন কাসীর (রহিমাহুল্লাহ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন:
حاسِبوا أنفسكم قبل أن تُحاسَبوا،
তোমরা নিজেদের হিসাব নিজেরাই নাও, এর আগেই যে তোমাদের হিসাব নেওয়া হবে।
وانظُروا ماذا ادَّخرتم لأنفسكم من الأعمال الصالحة ليوم معادكم،
তোমরা চিন্তা করো, আখিরাতের দিনের জন্য নিজেদের জন্য কী নেক আমল জমা করে রেখেছ।
واعلموا أنكم ستُعرضون على ربكم،
এবং জেনে রাখো, তোমরা তোমাদের রবের সামনে হাজির করা হবে।
وأنه عالمٌ بجميع أعمالكم وأحوالكم، لا تخفى عليه منكم خافية
তাঁর কাছে তোমাদের সব কর্ম, অবস্থা-সবই স্পষ্ট; কিছুই গোপন থাকবে না।
-তাফসীর ইবন কাসীর: ৪/৩৬৫
قال إبراهيم التَّيمي رحمه الله:
ইব্রাহিম আত-তাইমী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
مثَّلتُ نفسي في الجنة آكلُ من ثمارها، وأشرب من أنهارها،
আমি নিজেকে জান্নাতে কল্পনা করলাম, দেখলাম আমি জান্নাতের ফলমূল খাচ্ছি, জান্নাতের নহর থেকে পানি পান করছি।
ثم مثَّلتُ نفسي في النار، آكلُ من زقومها، وأشرب من صديدها،
এরপর নিজেকে জাহান্নামে কল্পনা করলাম, সেখানে আমি যাক্কুম গাছের ফল খাচ্ছি, আর পুঁজ ও রক্তমিশ্রিত পানীয় পান করছি।
وأعالج سلاسلها وأغلالها،
আর সেখানকার শৃঙ্খল ও বেড়ির সঙ্গে সংগ্রাম করছি।
فقلت لنفسي: أيّ نفس، أيّ شيء تُريدين؟
তখন আমি নিজেকে বললাম: হে আত্মা! তুমি কী চাও?
قالت: أُريد أن أُردّ إلى الدنيا فأعمل صالحًا
আত্মা বলল: আমি চাই, যেন আমাকে আবার দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়, যেন আমি সৎকর্ম করতে পারি।
قلت: فأنتِ في الأمنية فاعملي
আমি বললাম: তাহলে তুমি এখনো সে কামনার মধ্যে আছো-তাহলে এখনই আমল করে নাও!
واعلم أخي أن خير زادك في الرحيل هو زاد التقوى
প্রিয় ভাই! মনে রেখো-তোমার সফরের সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হলো তাকওয়ার পাথেয়।
﴿وَتَزَوَّدُوا فَإِنَّ خَيْرَ الزَّادِ التَّقْوَى﴾
তোমরা পাথেয় গ্রহণ করো; নিশ্চয়ই শ্রেষ্ঠ পাথেয় হলো তাকওয়া।
-সূরা আল-বাকারা: আয়াত ১৯৭
وهي اسمٌ جامعٌ لكلّ ما يُحبُّه الله ويرضاه
তাকওয়া এমন একটি পূর্ণাঙ্গ শব্দ, যার মধ্যে আল্লাহ যা ভালোবাসেন ও যা তাঁর সন্তুষ্টির কারণ, সব কিছু অন্তর্ভুক্ত।
من القيام بفرائضه، والتزام أوامره، واجتناب نواهيه،
আল্লাহর ফরজ আদেশ পালন, তাঁর নির্দেশ মানা এবং নিষেধসমূহ থেকে দূরে থাকা এর অন্তর্ভুক্ত।
والمسارعة إلى محابه
এবং আল্লাহর প্রিয় বিষয়গুলোর দিকে দ্রুত ধাবিত হওয়া-এটাও এর অন্তর্ভুক্ত।
فابذل جهدك لمعرفة حقيقة أعمالك، فصحّح أخي مسارك
তোমার কাজকর্মের প্রকৃতি যাচাই করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করো। প্রিয় ভাই! তোমার পথকে শুদ্ধ করো।
أين تصرف نظراتك؟
তুমি কোথায় তাকাও?
وأين تخطو خطواتك؟
তোমার পদক্ষেপগুলো কোথায় যায়?
وبمَ تتكلم لفظاتك؟
তোমার মুখ দিয়ে কী বের হয়?
وما هي آمالك وخطراتك؟
তোমার আশা-আকাঙ্ক্ষা ও হৃদয়ের চিন্তা কী নিয়ে?
يا غافلَ القلبِ عن ذكرِ المنيّات
হে অন্তরের গাফেল ব্যক্তি! যে মৃত্যু ও তার স্মরণ থেকে বিমুখ,
أما ترى كيف تمضي ساعات؟
তুমি কি দেখো না-কীভাবে মুহূর্তগুলো চলে যাচ্ছে?
فاذكر محلّك من قبلِ الحلولِ به
তুমি যে জায়গায় পৌঁছাতে যাচ্ছো, তার আগেই তা স্মরণ করো।
وانظر لمآلك عند الله من ذات
তোমার পরিণাম কী হবে আল্লাহর নিকট, তা একবার ভাবো।
واذكر مصائبَ أيّامٍ وساعات
স্মরণ করো সেই সব বিপদাপদ, সময় ও মুহূর্তের কথা-
لا تطمئنَّ إلى الدنيا وزينتها
তুমি কখনো দুনিয়া ও তার চাকচিক্যের প্রতি আত্মতুষ্ট হয়ো না।
قد حان للموت يا ذا اللبِّ آيات
হে বিবেকবান! মৃত্যুর সংকেত তো অনেক আগেই এসে গেছে।
يقول ابن القيِّم رحمه الله:
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেন:
الغافل عن الاستعداد للقاء ربّه
যে ব্যক্তি তার প্রভুর সাথে সাক্ষাতের জন্য প্রস্তুতি নেয় না,
والتزود لمعاده بمنزلة النائم
সে ব্যক্তি একজন ঘুমন্ত মানুষের মতো-
بل أسوأ حالاً منه
বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট অবস্থায়।
فإن العاقل يعلم وعد الله ووعيده،
কারণ জ্ঞানী ব্যক্তি তো আল্লাহর ওয়াদা ও সতর্কবার্তা জানে,
ولكنه قد يُحجب عن حقيقة الإدراك
তবুও সে কখনো বুঝার ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত হয়ে যেতে পারে।
ويقعده عن الاستدراك
এবং সে ভুল সংশোধনের পথ থেকে ছিটকে পড়তে পারে।
وسِنة القلب هي غفلته التي رقد فيها فطال رقوده
হৃদয়ের নিদ্রা হলো তার সেই গাফেলতি, যাতে সে নিদ্রিত, এবং দীর্ঘ সময় ধরে নিদ্রিতই রয়ে গেছে।
وانغمس في غمار الشهوات،
সে প্রবেশ করেছে প্রবলভাবে কুপ্রবৃত্তির মাঝে,
واستولت عليه العادات،
তার উপর দুনিয়ার অভ্যস্ততা হুকুমত চালাতে শুরু করেছে।
ورضي بالتشبه بأهل البطالات،
সে অলস ও অসার মানুষদের অনুসরণে সন্তুষ্ট হয়ে পড়েছে।
ومخالطة أهل إضاعة الأوقات
এবং সময় নষ্টকারীদের সঙ্গ গ্রহণে ব্যস্ত।
فهو في رقاده مع النائمين
সে ঘুমন্তদের সাথেই ঘুমিয়ে রয়েছে,
حتى تنكشف عنه الغفلة بزجرة من زواجر الحق
যতক্ষণ না কোনো কঠোর হক্বের আওয়াজ তাকে গাফেলতি থেকে জাগিয়ে তোলে।
فيستجيب لواعظ الله في قلب عبده،
তখন সে আল্লাহর দেওয়া অন্তরের উপদেশ গ্রহণ করে।
فينهض في ضوء ذلك الوعظ
তখন সে সেই আলোয় উঠে দাঁড়ায়-
وقد رأى سرعة انقضاء الدنيا،
যেখানে সে দুনিয়ার দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে,
﴿يَا حَسْرَتَى عَلَى مَا فَرَّطْتُ فِي جَنبِ اللَّهِ﴾
হায় আফসোস! আমি আল্লাহর বিষয়ে কত গাফেলতিই না করেছি!
-সূরা আয-যুমার: আয়াত ৫৬
فساق عزمه قائلاً:
তখন সে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে এগিয়ে আসে বলে:
فاستقبل بقية عمره مستدركًا بها ما فات،
জীবনের অবশিষ্ট সময়ের মাধ্যমে অতীতের ত্রুটি-পূর্ণ কাজগুলো সংশোধন করতে চায়।
محييًا بها ما مات،
যা মরে গিয়েছিল তা পুনরুজ্জীবিত করতে চায়,
مستقبلاً بها ما تقدم له من العثرات
আর অতীতের পাপ-ভুলগুলোর সামনে নতুনভাবে জীবন শুরু করতে চায়।
-রূহ লিল ইবনুল কাইয়্যিম: পৃষ্ঠা ২২৩
فاحذر الغفلة، فإنها تنسيك حقيقة سفرك، وتغريك بزخرف الدنيا، وتمنيك بالإقامة الزائفة.
তাই গাফেলতি থেকে বাঁচো, কারণ তা তোমাকে তোমার প্রকৃত সফর ভুলিয়ে দেবে; দুনিয়ার চাকচিক্যে বিভ্রান্ত করবে, এবং তোমাকে মিথ্যা বাসস্থানে স্থায়ী হওয়ার আশা দেখাবে।
وصلى الله على نبينا محمد، وعلى آله وصحبه وسلم.
আর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার ও সাহাবিগণের ওপর আল্লাহর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
সমাপ্ত
الحمد لله الذي بنعمته تتم الصالحات
সকল প্রশংসা আল্লাহর, যাঁর অনুগ্রহেই সৎকর্ম সম্পূর্ণ হয়।
-
১২ ধাপ তোমার স্বপ্নের পথে
Spread the love১২ ধাপ তোমার স্বপ্নের পথে12 خطوة للطريق إلى أحلامك” بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ ১২ ধাপ তোমার স্বপ্নের পথে […]
-
১০টি উপায়ে প্রতিবেশীর মন জয় করার পদ্ধতি
Spread the love১০টি উপায়ে প্রতিবেশীর মন জয় করার পদ্ধতিبسم الله الرحمن الرحيمবিসমিল্লাহির রহমানির রহিম الحمد لله وحده، والصلاة والسلام على […]
-
বিচ্ছেদের কারণ ও ইসলামি সমাধান
Spread the loveবিচ্ছেদের কারণ ও ইসলামি সমাধান بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ভূমিকাالحمد لله رب العالمين، وصلى […]
-
Hello world!
Spread the loveWelcome to WordPress. This is your first post. Edit or delete it, then start writing!